Saturday 15 July 2017

সাহসিকতার যে গল্প চোখ ভিজিয়ে দেয় .

এমন দৃশ্য দেখে কাল ব্র্যাড কত খুশি হতো! প্রথমে হেঁটে এল ‘স্পাইডারম্যান’, তার সঙ্গী ‘ব্যাটম্যান’। পেছনেই আছে ‘ওয়ান্ডার উইমেন’, ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’। সবার পেছনে নিজের নামকে ভুল প্রমাণ করে ধীরেসুস্থে হেলেদুলে আসছে ‘ফ্ল্যাশ’! এত সব সুপারহিরো মিলেমিশে হেঁটে আসছে শুধু ব্র্যাডের দেখা পেতেই।
তবে ব্র্যাডের ছোট মুখটা আলোতে ভরে যেত, এদের পেছনে থাকা মানুষদের দেখলে। ওর মা–বাবার পেছনেই ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে হেঁটে আসছেন জার্মেই ডিফো। ভালোবাসার সান্ডারল্যান্ডের জার্সিটা কেন পরলেন না, সেটা নিয়ে একটু মন খারাপ ভাব মনে আসতেও পারত ব্র্যাডের। তবু নতুন ক্লাবের খেলা ফেলে শুধু তাকে দেখতে নিজের প্রিয় ফুটবলার এভাবে চলে এসেছেন, দেখে খুশিতে ভরে উঠত ব্র্যাডের মুখটা।
 একটু পরেই অবশ্য মন খারাপ হতো তাঁর। ডিফো কেন বারবার রুমালে মুখ মুছছেন! বারবার শাসন-ধমকেও বাগে আনতে পারছেন না অবাধ্য চোখকে। কারও সাহস হচ্ছে না ডিফোর কাছে যাওয়ার, তাঁর চোখ দুটো মুছে দেওয়ার। আজ ব্র্যাড থাকলে এটা কি কখনো সম্ভব হতো! ব্র্যাড থাকলে ডিফোর চোখে জল আসে কীভাবে!
র্যাডলি লরি, ছয় বছরের মহাশক্তিধর এই শিশুর জন্যই ব্ল্যাকহল কলিয়েরিতে হাজির হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। সান্ডারল্যান্ডের মায়া কাটিয়ে চলে যাওয়া ডিফোও ফিরে এসেছেন। 
নিউক্যাসল, এভারটন, সেল্টিক কিংবা ব্র্যাডের সান্ডারল্যান্ডের জার্সি পরে সবাই দাঁড়িয়ে ছিলেন রাস্তার পাশে। ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করা এক সাহসী যোদ্ধাকে সম্মান জানাতে হবে না! ‘বীর’ ব্র্যাড ৭ জুলাই সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছে না–ফেরার দেশে। এ পৃথিবীকে যা দেওয়ার সেটা দিয়ে ফেলেছে সে, দেখিয়েছে কীভাবে সাহসের সঙ্গে লড়তে হয়, কীভাবে অবধারিত পরিণতি জেনেও হাসিমুখে থাকতে হয় নিরন্তর।
চার বছর ধরে নিওরোব্লাস্টোমায় ভুগেছে ব্র্যাড। তবে পুরো ব্যাপারটা সবার সামনে আসে, সান্ডারল্যান্ডের এক ম্যাচে মাসকট বয় হিসেবে ব্র্যাডের মাঠে নামার পর। ডিফোর সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব পেয়েছিল অন্য মাত্রা। সাহসী এই শিশুর গল্পে মুগ্ধ ডিফো ব্র্যাডের সঙ্গে গড়েছিলেন আত্মিক বন্ধন। ব্র্যাডের কারণেই তো দেখা গিয়েছিল সেই অসাধারণ এক দৃশ্য—চেলসির গোলরক্ষককে ফাঁকি দেওয়ার বুদ্ধি শিখিয়ে দিচ্ছেন চেলসিরই স্ট্রাইকার ডিয়েগো কস্তা। ব্র্যাডের গড়ানো শটে বেগোভিচের উল্টো দিকে পড়ে যাওয়া; সে গোলের ‘ম্যাচ ডের’ সেরা গোলের পুরস্কার পাওয়া—কার চোখ ভেজেনি সেদিন?
সেদিন জায়ান্ট স্ক্রিনে লেখা হয়েছিল সান্ডারল্যান্ড ১ (লরি)-০ চেলসি। ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরো বিশ্বকে সচেতন করেছে লরি। সবাইকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে শিশুদের ক্যানসার নিয়ে নতুন করে ভাবিয়েছে সে। কাল তাই যখন ব্র্যাডের ছোট্ট শরীরটা সমাহিত হলো, তখন কিন্তু স্কোরবোর্ড অন্য কিছু লিখছে...

No comments:

Post a Comment

please dont any bad comments. its always helpful site,