Friday, 25 August 2017

উজ্জীবিত কিশোরদের সামনে দারাতে পারবে নেপাল ?

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট বিশ্বাস হ্রদয়ে,... দেখা হবে বিজয়ে’—গানটি হয়তো অনবরত বেজে চলছে বাংলাদেশের কিশোরদের মনে। কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সে আজ স্বাগতিক নেপালকে হারাতে পারলেই সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফাইনালে পৌঁছে যাবে তারা। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের মনের বাসনা তো তাই-ই। আজ বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হবে এ ম্যাচ।
শ্রীলঙ্কা ও ভুটানকে ৪-০ ও ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে সেমিতে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ নেপাল ৬-০ গোলে মালদ্বীপের বিপক্ষে বড় জয় পেলেও ভারতের বিপক্ষে হেরেছে ২-১ গোলে। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে ৭ গোলের বিপরীতে বাংলাদেশের জাল রয়েছে অক্ষত। অন্যদিকে সমানসংখ্যক গোলের বিপরীতে স্বাগতিক দল গোল হজম করেছে ২টি।
নেপাল বরাবরই নিজেদের মাঠে শক্তিশালী। একাডেমি থাকায় বয়সভিত্তিক পর্যায়ে তা আরও বেশি। তবে আশার কথা হলো, স্বাগতিকদের চেয়ে এক দিন বেশি বিশ্রাম নিয়ে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া দলে নেই কোনো ইনজুরি। নেপাল থেকে পাওয়া সূত্র জানাচ্ছে, শেষ ম্যাচে খেলা দলকেই আজ মাঠে নামাবেন কোচ মোস্তফা আনোয়ার পারভেজ।
দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশ দলের শক্তিমত্তা:
ফরমেশন: ৪-২-৩-১
গোলরক্ষক
সামিউল বাশার: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একাদশে ছিল না প্রায় ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার এই গোলরক্ষক। দ্বিতীয় ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে সুযোগ পেয়ে ভালো পরীক্ষা দিতে হয়েছে নওগাঁর এই ছেলেকে। নিচ থেকে বিল্ডআপ আক্রমণ তৈরি করতে না পারলেও গোলপোস্টের নিচে আস্থাবান। সাহসিকতা বাশারের সবচেয়ে বড় গুণ। গ্রিপ ভালো, সময়মতো পোস্ট ছেড়ে বেরও হয়ে আসতে পারে। ডি বক্সে এরিয়াল বল দখলে নিতে বেশ পারদর্শী । তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, নিচু বলে দুর্বলতা বেশ।
রক্ষণভাগ
টুর্নামেন্টে এখনো গোল হজম করেনি তারা। চারজনের মধ্যে তিনজনের উচ্চতাও বেশ। এরিয়াল বলে বাংলাদেশের সঙ্গে পেরে উঠবে না নেপাল দল। বাংলাদেশ জাতীয় দলের ‘সেটপিস’ জুজু থাকলেও কিশোরদের রক্ষণভাগ ‘সেটপিসে’ বেশ পক্ব। এ ছাড়া নিচ থেকে আক্রমণ গড়তে সহায়তা করে।
জিহাদ হোসেন (সেন্টারব্যাক): ৪ নম্বর জার্সিধারী এই সেন্টারব্যাকই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। ঠান্ডা মাথার ডিফেন্ডার হিসেবে পরিচিত। উচ্চতা কম হলেও হেডওয়ার্ক দুর্দান্ত। নিচ থেকেই আক্রমণ গড়তে পারে। আক্রমণের সময় মাঝমাঠের সঙ্গে সেতুটা তৈরি করে কুষ্টিয়ার এই ছেলেটিই। নেপাল দলের আক্রমণের প্রাণভোমরা বীরযেশ চৌধুরীকে ঠেকানোর কাজটা তাকেই করতে হবে। তবে দুর্বলতা একটাই, ধীর গতি।
ফাহিম (সেন্টারব্যাক): প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করতে জুড়ি নেই ৫ নম্বর জার্সিধারী এই সেন্টারব্যাকের। দলের মধ্যে শারীরিকভাবে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়াই তার প্রধান গুণ। হেডওয়ার্কও বেশ। তবে নিচ থেকে আক্রমণ গড়তে পারে না।
নাজমুল বিশ্বাস (রাইটব্যাক): রক্ষণভাগে খেললেও খুবই ঠান্ডা মেজাজি। আক্রমণ তৈরি করতে পারদর্শী। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গোলও করেছে একটি। ওভারলেপিং শেষে আবার সময়মতো ট্র্যাক ব্যাকও করতে পারে। ক্রসিং দুর্দান্ত।
ইয়াসিন আরাফাত (লেফটব্যাক): অতিরিক্ত মিস পাসের জন্য বদনাম আছে বাঁ পায়ের এই খেলোয়াড়ের। ঠিক তেমনি দুর্দান্ত হেডিংয়ের জন্য আছে সুনাম। এ ছাড়া স্কিল ও গতিতে বেশ এগিয়ে সে। ফলে ওভারলেপিংয়ে গিয়ে ক্রসও ভালো করতে পারে।
মাঝমাঠ
‘ডাবল পিভট’ দুজন হোল্ডিং মিডফিল্ডার খেলে থাকে। তাদের সামনে একজন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার ও দুই উইঙ্গার নিয়েই বাংলাদেশের মাঝমাঠ। প্রতিপক্ষের পায়ে বল থাকলে বেশ জমাট থাকে। আবার নিজেদের পায়ে বল এলেই দ্রুত ‘উইং প্লে’ করে খেলা তৈরি করে।
রাজা শেখ (হোল্ডিং মিডফিল্ডার): ছোটখাটো গড়নের ১৫ নম্বর জার্সিধারী বাংলাদেশ দলের মাঝমাঠের মেরুদণ্ড। প্রচুর কথা বলে দলকে সংঘবদ্ধ করে রাখে। এ ছাড়া প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে দ্রুত উইং দিয়ে আক্রমণ তৈরি করে। গতির সঙ্গে বল কন্ট্রোলও বেশ। তবে এরিয়াল বলে দুর্বলতা আছে।
আক্কাস আলি (হোল্ডিং মিডফিল্ডার): বল প্লেয়ার। মাঝমাঠ থেকে খেলা তৈরি করে। শারীরিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় পুরো মাঠ চষে বেড়ায়। ম্যাচ রিডিং ভালো।
উজ্জ্বল (আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার): দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডারের সামনে খেলে থাকে। প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগকে ধাঁধায় ফেলে নিজের স্ট্রাইকারকে গোলমুখে জায়গা তৈরি করে দেয়। গতির সঙ্গে বল নিয়ন্ত্রণ ভালো।
মিনহাজুল আবেদীন স্বাধীন (রাইট উইঙ্গার) : যশোরের শামসুল হুদা একাডেমির এই ছাত্র রাইট উইং দিয়ে ইতিমধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। ভুটানের বিপক্ষে দুর্দান্ত ক্রসে গোল করিয়েছে মিরাজকে দিয়ে। প্রচুর দৌড়ে সতীর্থদের কাছ থেকে বল জোগাড় করে নিতে পারে। আবার রক্ষণভাগকেও সহায়তা করে।
ফয়সাল হোসেন ফাহিম (লেফট উইঙ্গার): শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে সিরাজগঞ্জের কিশোর। ভুটানের বিপক্ষে করেছে অসাধারণ এক গোল। ইতিমধ্যে চার গোল করে টুর্নামেন্টের পোস্টার বয়। বাঁ পা চলে বুলেটের মতো। গতিতে পেছনে ফেলতে পারবে ডিফেন্ডারদের। তাকে ঠেকাতে কোমর বেঁধে নামতে হবে নেপালের রক্ষণভাগকে।
আক্রমণভাগ
একজন স্ট্রাইকারের সঙ্গে দুই উইঙ্গারই মূলত আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা। ‘নম্বর নাইন’ হিসেবে মিরাজ মোল্লা খেললেও তার দায়িত্বটা থাকে বল নিয়ন্ত্রণে রেখে উইঙ্গারদের উঠতে সহায়তা করা। আর প্রতিপক্ষ দুই সেন্টারব্যাককে খেলা তৈরি করার কোনো সুযোগ দেয় না সে।
মিরাজ মোল্লা (স্ট্রাইকার): ভুটানের বিপক্ষে জোড়া গোল করে বুঝিয়ে দিয়েছে কেন তার গায়ে তুলে দেওয়া হয়েছে ১০ নম্বর জার্সি। ভুটানিজ রক্ষণের ফাঁক গলে হেডে করেছে প্রথম গোল। দ্বিতীয় গোলটি এসেছে নিখুঁত প্লেসিংয়ে। শারীরিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় আক্রমণভাগে বল ধরে রাখতে পারে। গতির সঙ্গে কঠোর পরিশ্রমও করতে জানে। জায়গা বদল করে খেলতে পারে উইংয়েও। সবকিছু মেলালে বাংলাদেশের ১০ নম্বর জার্সিধারীকে পরিপূর্ণ ১ ‘নম্বর নাইন’ই মনে হয়।

No comments:

Post a Comment

please dont any bad comments. its always helpful site,