Thursday 24 August 2017

‘স্মার্ট’ রিকশা চালকের ‘স্মার্ট’ আয়,

রিকশাচালক মো. ফারুক (৩০)। রিকশা চালান লক্ষ্মীপুর শহরে। তবে তিনি রিকশা চালালেও তার একটা আলাদা পরিচয় আছে। সেটি হল ‘স্মার্ট’ রিকশা চালক। কেননা তিনি যখন রিকশা চালান তখন পড়েন ইস্ত্রি করা শার্টের সঙ্গে মিলিয়ে প্যান্ট, গলায় টাই, সানগ্লাসে ঢাকা চোখ, মাথায় ক্যাপ, হাতে ঘড়ি, আঙ্গুলে সোনার আংটি (রিং), পায়ে চকচকে জুতা (সু)। সাথে ব্যবহার করেন মোবাইলও। আর তার রুচিশীল পোশাক-পরিচ্ছদ তাকে এই আলাদা পরিচয় দেয়। প্রতিদিন স্মার্ট হয়ে শহরের অলি-গলিতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
স্থানীয়দের কাছেও তিনি তাই ‘স্মার্ট’ রিকশা চালক। তার রুচিশীল এসব পোশাক-আশাক ছাড়াও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার চেষ্টা, বুদ্ধিমত্তা ও সুন্দর আচরণে মুগ্ধ সবাই। ফারুক লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাঞ্ছানগর এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে। মা-বাবা, স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে তার সংসার। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে বেশ কিছুদিন সামান্য বেতনে চাকরি করেন।
চাকরি ছেড়ে গত এক বছর ধরে লক্ষ্মীপুর শহরসহ আশেপাশের এলাকায় রিকশা চালাচ্ছেন ফারুক। স্মার্টনেসের পাশাপাশি দক্ষ চালক হওয়ায় শহরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণও করতে পেরেছেন দ্রুতই। ফারুক জানান, যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণেই ব্যতিক্রমী এ সাজে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। ‘স্মার্ট’ হয়ে কাঙ্খিত প্রত্যাশা পূরণও হচ্ছে। ২০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকাও পেয়েছেন।
ফারুককে নিয়ে কৌতুহলও কম নয়। অনেকেই সেলফি তোলেন, কেউ কেউ শখ করে তার রিকশায় উঠে শহরে ঘোরেন, চায়ের আড্ডাও করেন।
তার ব্যাটারি চালিত এ রিকশায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ওঠেন। সময় করে স্ত্রী-সন্তানকে রিকশায় নিয়ে বেড়াতে বের হন ফারুক নিজেও।
ফারুক জানান, তার ৭/৮টি প্যান্ট, সমান সংখ্যক শার্ট, তিন জোড়া জুতা, তিনটি টাই ও শীতের জন্য দু’টি ব্লেজার আছে। এসব নিজের পছন্দে উপার্জিত টাকায় কেনা।
কলেজ ছাত্র শাকিল ও জামাল বলেন, ‘স্মার্ট ওই রিকশা চালককে দেখতে বেশ ভালো লাগে। তিনি কাউকে বাড়তি ভাড়ার জন্য চাপ দেন না। তবে বেশিরভাগ যাত্রী নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা দেন’।
ফারুক বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা বেশি বিক্রির আশায় তাদের দোকানকে ভালো সাজ-সজ্জায় নানাভাবে সাজান। আমিও তেমনি স্মার্ট হয়ে রিকশা চালিয়ে যাত্রী আকর্ষণের চেষ্টা করছি। পরিপাটি হয়ে চলতে নিজের কাছেও ভালো লাগে। এতে দু’দিকেই লাভ- যাত্রী ও ভাড়া বেশি মেলে, শরীর-মনও ভালো থাকে’।

No comments:

Post a Comment

please dont any bad comments. its always helpful site,